আশ্রয়ণ প্রকল্প (আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প নামেও পরিচিত), বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ একটি সরকারি প্রকল্প যার মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন এবং যার জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন। তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”।
১। ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন।
২। প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা।
৩। আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ।
সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলোকে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনা সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সমাজের মূলধারার মানুষের সাথে জলবায়ু উদ্বাস্তু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, ভিক্ষুক, বেদে, দলিত, হরিজনসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও জমিসহ ঘর প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে তাদেরকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যারাক, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন প্রকার ঘর ও মুজিববর্ষের একক গৃহে মোট ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২৪৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
একটি গৃহ কীভাবে সামগ্রিক পারিবারিক কল্যাণে এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের এই নতুন পদ্ধতি ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। শেখ হাসিনা মডেলের মূল ছয়টি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
১. উপার্জন ক্ষমতা ও সঞ্চয় বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা;
২. সম্মানজনক জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা;
৩. নারীদের জমিসহ ঘরের অর্ধেক মালিকানা দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন করা;
৪. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা;
৫. ব্যাপকহারে বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের উন্নতি সাধন করা;
৬. গ্রামেই শহরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই করার উত্তম চর্চা হিসেবে সমাদৃত হয়েছে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট সম্পন্ন ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শেখ হাসিনা মডেল’। এরই ধারাবাহিকতায়, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় আনছেন। সমাজের অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ২ শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা একক ঘর প্রদান করা হচ্ছে। জমিসহ ঘরের মালিকানা পেয়ে তারা অর্থনৈতিক উন্নন প্রক্রিয়া নিয়োজিত করেছেন । ফলে এসকল পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নততর হচ্ছে। উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে আশ্রয়ণের বাড়ি ও জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেয়া হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের উৎপাদনমুখী নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সঞ্চয়ী হতেও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে বিনামূল্য বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থার মাধ্যমে উপকারভাগীদের জন্য আধুনিক নাগরিক সুযোগ –সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
মুজিববর্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয় । সমগ্র দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে মুজিববর্ষে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
এ কর্মসূচির ঊপকারভোগীঃ
‘ক’ শ্রেণির পরিবারঃ সকল ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবার।
‘খ’ শ্রেণির পরিবারঃ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ জমির সংস্থান আছে কিন্তু ঘর নেই এমন পরিবার।
প্রাথমিকভাবে ‘ক’ শ্রেণির পরিবারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি নিষ্কন্টক খাস জমি, সরকারিভাবে ক্রয়কৃত জমি, সরকারের অনুকূলে কারও দানকৃত জমি অথবা রিজিউমকৃত জমিতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ সংযোজনঃ ২ কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের এ প্রকল্পটিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সংযোজন করা হয় ৪০০ বর্গফুট আয়তনের ২ কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহ। এই ঘরে সুপরিসর ২ টি কক্ষের সামনে টানা বারান্দা এবং পেছনে রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাটট্রিন। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি পুনর্বাসিতদের জন্য রয়েছে নিরাপদ সুপেয় পানীর ব্যবস্থা। ক্লাস্টারভিত্তিক স্থাপিত প্রকল্প গ্রামগুলোতে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিনন্দন লে-আউটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীন রাস্তা, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর, খেলার মাঠ প্রভৃতি নিশ্চিত করা হয়।
এ প্রক্রিয়ায় মুজিববর্ষে প্রথম পর্যায়ে ২১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ৬৩ হাজার ৯৯৯ টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ ঘর প্রদান করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন ২০২১ তারিখে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবারকে অনুরূপভাবে গৃহ প্রদান করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন রয়েছে আরো ৬৫ হাজারেরও অধিক ঘর। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩টি পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা একক ঘর প্রদান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রমাণ রেখেছেন। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও গৃহ প্রদান ইতিহাসে প্রথম ও সর্ববৃহৎ উদ্যোগ। রাষ্ট্রের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে তুলে আনার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাসগৃহ নির্মাণ করে জমির চিরস্থায়ী মালিকানা দেওয়া হচ্ছে। জমি কেনার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার উদাহরণ বিশ্বে কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়, কিন্তু বিনাম্যল্য ঘরসহ জমির মালিকানা দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশেই প্রথম।
· সারাদেশে উদ্ধারকৃত খাস জমির হালনাগাদ পরিমাণঃ ৫৫১২.০৪ একর
· সারাদেশে উদ্ধারকৃত খাস জমির আনুমানিক স্থানীয় বাজার মূল্যঃ ২৯৬৭ কোটি ৯ লক্ষ টাকা
· সারাদেশে ক্রয়কৃত জমির হালনাগাদ পরিমাণঃ ১৫৫ একর
· জমি ক্রয় বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণঃ ১০৮ কোটি ৯১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা
১. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ: ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ভূমি ও গৃহের মালিকানা স্বত্ব প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া), বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবার যেন ভবিষ্যতে মালিকানা সংক্রান্ত কোন জটিলতায় না পড়েন সেজন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক জমির মালিকানা স্বত্বের রেজিস্টার্ড দলিল/কবুলিয়ত, নামজারি খতিয়ান ও দাখিলাসহ সরেজমিনে দখল হস্তান্তর করা হয়।
২. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য কর্মসূচির সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি অগ্রাধিকারসহ বিবেচনা করা হয়।
৩. মানবসম্পদ উন্নয়নঃ পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ আশ্রয়ণ প্রকল্প ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক সংস্থা এবং এনজিওকেও এসব কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
৫. গ্রামেই শহরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণঃ পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় এবং প্রকল্প স্থানে নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য নলকূপের সংস্থান করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ/মন্দির ও কবরস্থানসহ পুকুর খনন ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়।
৬. পরিবেশ উন্নয়নঃ প্রকল্প এলাকায় ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপন করাসহ কৃষি কাজে গৃহহীনদের উৎসাহ প্রদান করা হয়।
৭. উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণঃ পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়।
মুজিববর্ষে লাখো ভূমিহীনকে পূনর্বাসনের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে রয়েছে জেলা প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মিলিত প্রয়াস । মুজিববর্ষের সেমি পাকা একক গৃহ নির্মাণের পুরো কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে। ভূমিহীন পুনর্বাসনের এ মহাকর্মযজ্ঞে বিপুল পরিমাণ খাসজমি উদ্ধারের মাধ্যমে সমগ্র দেশের জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন পূনর্বাসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মহতী উদ্যোগে সামিল হয়েছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিত্ত্ববান মানুষ এবং সরকারি কর্মকর্তাগণ। সমাজের নানা শ্রেণির পেশার মানুষের আন্তরিক অংশগ্রহণের ফলে মুজিববর্ষে সরকারের এ বিশেষ উদ্যোগ রূপ নিয়েছে সামাজিক আন্দোলনে।
জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসনের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক ৫-তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ৪৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে। যেখানে থাকছে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত পর্যটন জোন, আয়বর্ধক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আধুনিক শুটকী মহাল এবং সুশীতল পরিবেশের বাফার জোন। কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন খুরুশকুল মৌজায় ২৫৩.৫৯ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ৬৪০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ৪০৬.০৭ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট একটি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান শুরু হয়েছে।প্রকল্পটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রকল্প।
বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র বিমোচনের ম্যাজিক বা রহস্য হলো বর্তমান সরকারের তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নীতিকৌশল এবং নানা ইতিবাচক উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা সম্পদের সুষম বণ্টনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র ভিক্ষুক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষকে ভূমি ব্যবহারের আওতায় এনে অন্যান্য সামাজিক সুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। জলবায়ু উদ্বাস্তু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া), বেদে, ভিক্ষুক, দলিত, হরিজনসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ কর্মসূচিতে। বিশ্বে এটি প্রথম ও সর্ববৃহৎ উদ্যোগ, যাতে রাষ্ট্রের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে তুলে আনার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে অচ্ছুতদের (কুষ্ঠ রোগী) নতুন জীবন এবং বান্দাবাড়ী আশ্রয়ণের মাধ্যমে পুনর্বাসন, তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষদের পুনর্বাসন, তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের গৃহ নির্মাণ, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় কয়লাখনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুনর্বাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি (রাখাইন) পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের টং ঘর নির্মাণ, হরিজন সম্প্রদায় পুনর্বাসন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন সহ দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক অনগ্রসর জনগোষ্ঠির পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস